২০১১ এবং ২০১৫, দু’বার চেষ্টা করেও ভারতের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি সম্পন্ন করতে পারেনি বাংলাদেশ। ঢাকার অভিযোগ, ফি বর্ষায় তিস্তার জলে বন্যার সম্মুখীন হয় রংপুর-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষজন। আর জলকষ্টে দিন কাটে শীতে। এই পরিস্থিতিতে সমস্যা সমাধানে প্রায় ১০০ কোটি ডলারের ঋণ নেওয়ার বিষয়ে চিনের সঙ্গে চূড়ান্ত পর্যায়ের কথাবার্তা চালাচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিস্তার জল নিয়ে চুক্তির ক্ষেত্রে আপত্তি জানিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। কারণ, সিকিম তিস্তার উপর একাধিক বাঁধ দেওয়ায় বাংলাদেশের মতোই সমস্যায় ভোগে বাংলা। তাই উত্তরবঙ্গের মানুষের স্বার্থের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে চুক্তিতে সম্মতি দেননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নয়াদিল্লিও স্থানীয় দাবি অগ্রাহ্য করে পড়শি দেশের দাবি মানার পথে যায়নি। কিন্তু সেই নদী-পথে চিন ঢুকে আসায় উদ্বিগ্ন ভারত। সূত্রের খবর, ১৮ অগস্ট দেশের বিদেশ সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলার ঢাকায় যাওয়ার অন্যতম কারণই ছিল তিস্তায় চিনের ঋণ। সরকারি ভাবে সেই তথ্য স্বীকার করা না হলেও, যে ভাবে চার্টার্ড ফ্লাইটে শ্রিংলা ঢাকায় ছোটেন, তাতে নয়াদিল্লির অস্বস্তি অনেকটাই স্পষ্ট হয়েছে। একসময় ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার শ্রিংলাই কোভিড পরিস্থিতিতে প্রথম বিদেশি কূটনীতিক, যাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন হাসিনা!
বাংলাদেশ যে শুধুমাত্র ভারতের ভরসায় থাকছে না, তার ইঙ্গিত ২০১৭ সালের এপ্রিলের ভারত সফরেই দিয়েছিলেন হাসিনা। বস্তুত তার আগের বছরই বাংলাদেশের জলসম্পদ উন্নয়ন বোর্ড এবং চিনের সরকারি সংস্থা পাওয়ার চায়নার মধ্যে তিস্তার মাস্টার প্ল্যান নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। যাতে বর্ষায় বন্যার হাত থেকে বৃহত্তর রংপুরের মানুষকে রক্ষা করা যায় এবং সেই জলকেই পরবর্তী শীতে কাজে লাগানো যায়।
ঘটনা হল, বিষয়টিকে একটি নদীর উন্নয়ন হিসেবে দেখতে নারাজ নয়াদিল্লি। চিন ক্রমশই ভারতের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সাম্প্রতিক লাদাখের ঘটনার পাশাপাশি নেপালের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির পিছনেও চিনা হাত দেখতে পাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই অবস্থায় বাংলাদেশেও চিনা প্রভাব বেড়ে গেলে দুশ্চিন্তা বাড়বে বই কমবে না। প্রথমত, সীমান্ত সমস্যা বাড়তে পারে। দ্বিতীয়ত, ‘আত্মনির্ভর’ ভারত অস্ত্র বানানো শুরু করলে বিক্রির জন্য বাংলাদেশের মতো দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক দরকার। না-হলে বাণিজ্যের ক্ষতি। সূত্র: India Times