আগরতলা: আগরতলার পার্শ্ববর্তী লেম্বুছড়া এলাকার মৎস্য কলেজে আধুনিক পদ্ধতিতে কৃষি মৎস্য পালন এবং প্রযুক্তিগত পরিকাঠামো উন্নয়ন সংক্রান্ত এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বুধবারের এই অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারত সরকারের কৃষি এবং কৃষক কল্যাণ মন্ত্রকের মন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর, ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব, ত্রিপুরা সরকারের কৃষি এবং কৃষক কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী প্রণজীত সিংহ রায়, স্থানীয় বিধায়ক কৃষ্ণধন দাস, ইম্ফল কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড অনুপ মিশ্রা, আগরতলা মৎস্য কলেজের ডিন অধ্যাপক আর কে সাহা প্রমূখ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে উপস্থিত অতিথিরা কলেজের বিভিন্ন কাজকর্ম বিশেষ করে উন্নয়ন ও গবেষণা মূলক কাজকর্ম ঘুরে দেখেন, একটি ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন, রাজ্যের বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য হাঁস-মুরগি, স্ব সহায়ক দলের সদস্যরা তাদের উৎপাদিত বিভিন্ন সামগ্রীর প্রদর্শনী নিয়ে বসেন এগুলি ঘুরে দেখেন। সবশেষে কলেজের সভাকক্ষে হয় মূল অনুষ্ঠান। এখানে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে আগত সকল চাষীদের সঙ্গে অতিথিরা মতবিনিময় করেন। উপস্থিত অতিথিদের সামনে কৃষকরা জানান কি করে সরকারি সুবিধার মাধ্যমে বিশেষ করে কৃষি এবং কৃষকদের উন্নয়নকল্পে সরকার যেসব প্রকল্প গ্রহণ করেছে এগুলি সাহায্যে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ভারত সরকারের কৃষি এবং কৃষক কল্যাণ মন্ত্রকের মন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর বলেন- মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের হাত ধরে ত্রিপুরা রাজ্যের ভাগ্য বদল হবে। আগে যে সরকার রাজ্যে কাজ করেছে তাদের সঙ্গেও তার কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। এখন ভারত সরকার ত্রিপুরা রাজ্যের উন্নতির জন্য যে পরিমাণ অর্থ দিত তখনো সেই পরিমাণ অর্থ দেওয়া হতো। কিন্ত সাবেক সরকারের কাজের প্রতি এবং মানুষের উন্নয়নের দিকে তাদের তেমন গুরুত্ব ছিল না কিন্তু বর্তমান সরকার মানুষের জন্য কাজ করছে। বর্তমান সরকার দ্রুতার সঙ্গে উন্নয়ন মূলক কাজ সম্পন্ন করার বিষয়ে আগ্রহী ফলে নতুন নতুন কাজ হচ্ছে এখানে।
তিনি আরো বলেন ২০১৪ সাল থেকে ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নের জন্য কাজ করছেন। এমনকি তিনি নিজে এই অঞ্চলে তার প্রধানমন্ত্রীত্বের সাত বছরে অনেকবার এসেছে। কেন্দ্র মন্ত্রীরা কতবার উত্তরপূর্বে এসেছে তার গননা নেই। এই জন্য এই অঞ্চলে এখন দ্রুত কাজ চলছে। কৃষিকে উন্নতি করার জন্য ভারত সরকার এবং রাজ্য সরকার কাজ করছে। কৃষকের উৎপাদন খরচ কম করা এবং যে সব ফসলের দাম বেশী পায় এবং অধিক ফলে এধরনের ফসল চাষে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এই কাজের জন্য উত্তর-পূর্ব ভারতে বিভিন্ন কৃষি সংস্থান স্থাপন করা হচ্ছে। এর ফল পাওয়া যাচ্ছে। আগে যেখানে ত্রিপুরা রাজ্যে মাত্র ৪হাজার সহায়ক দল ছিল এখন তা বেড়ে ২৬হাজার হয়েছে। তিনি আরো বলেন করোনা মহামারীর সময় সারা বিশ্বের ভারি ভারি শিল্প-কারখানা যখন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল এই সময় ভারতের কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক হয়েছে। ফল স্বরূপ কৃষকরা করোনাকালীন সময়ে ক্ষতির সম্মুখীন হননি আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন পাশাপাশি ভারতে খাদ্য পণ্য সামগ্রী সংকট তৈরি হয়নি।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন ত্রিপুরা রাজ্যের কৃষি ক্ষেত্রে কাজে ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। রাজ্যের দুধের চাহিতা মেটানোর জন্য বছরে ১১শ কোটি টাকা অন্য রাজ্যে চলে যায়। তাই রাজ্যে দুধের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য এবং অন্য রাজ্যে যাতে অর্থ না চলে যায় তার জন্য সরকার নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। এজন্য ১২শ গাভিকে বিশেষ ধরনের সেক্সসটেড সিমেন দিয়ে প্রজনন করা হচ্ছে। এবছর ১২০৬৫গাভিকে প্রজনন করা হয়েছে এবং ভালো ফলও পাওয়া গিয়েছে নতুন যে বাছুরের জন্ম হয়েছে এর মধ্য ৯৪শতাংশের বেশী মেয়ে বাচ্ছার জন্ম হয়েছে। হাঁস পালনে বর্তমান সরকার জোর দিয়েছে ফলে রাজ্যের খামারিরা লাভবান হচ্ছেন। রাজ্যের পোল্ট্রি শিল্পে নতুন নতুন লোক যুক্ত হচ্ছেন। বর্তমানে ত্রিপুরা রাজ্যের প্রায় ৮ হাজার লোকের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এই শিল্পে বছরে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার ব্যবসা হচ্ছে। কোভিডের মধ্যেয় ত্রিপুরার মানুষের আয় বেড়েছে প্রায় ২৫শতাংশ।
অপর দিকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কৃষি ও কৃষক কল্যান দপ্তরে মন্ত্রী প্রণজীত সিংহ রায় বলেন – বর্তমান সরকারের সময় নতুন নতুন বহু প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের পাশাপাশি অন্যান্য দেশেও রাজ্যের কৃষি পন্য রপ্তানির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। রাজ্যের ৩৫শতাংশ এলাকায় সেচের ব্যবস্থা রয়েছে। বাকি জমি চাষের জন্য বৃষ্টির জলের উপর নির্ভর করতে হয়। এই অবস্থায় বর্তমান সরকার কৃষকদের আয় বৃদ্ধি করার জন্য নতুন পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। প্রকৃত উৎস এবং কম জল পাওয়া যায় এমন জমিতে বিশেষ ধরনের সবজি ও ফল চাষ করতে যেগুলিতে পানির কম প্রয়োজন হয় এবং অধিক ফসল হয়। যার ফলে কৃষকদের সহায়তা হচ্ছে তারাও আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। সেই সঙ্গে কৃষক সম্মান নিধি সহ বিভিন্ন ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। বর্তমান সরকার কৃষকদের সবচেয়ে প্রথম গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে।