আমরা গ্রাহকের কথাটা শুনি। তাদের প্রয়োজনীয়তা হিসেব করে নিরাপদ আবাসন নির্মাণ করি। আমরা শুধু বিল্ডিং বানাচ্ছি না। একটা পরিবার সেখানে যুগযুগ স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারবে। সবুজায়ন এবং চারপাশের প্রতিবেশিদের কথাও মাথায় রাখছি। আমাদের সবচেয়ে বড় পাওয়া গ্রাহকদের আস্থা অর্জন- হোসেন খালেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, আনোয়ার ল্যান্ডমার্ক।
২০০১ সালে আনোয়ার গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান আনোয়ার ল্যান্ডমার্কের যাত্রা শুরু হয়। পুরান ঢাকায় কিছু প্রকল্পে কাজ করে প্রতিষ্ঠানটি। এরপর শ্যামলী। এখন ধানমণ্ডি, মিরপুর, শ্যামলী, উত্তরা, বারিধারা, মিরপুর ডিওএইচএসসহ ঢাকা শহরের আরো কিছু জায়গায় কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। সব জায়গায় ইটপাথরের জঙ্গল হচ্ছে। চার দেয়াল ছাড়া বাসা বলতে কিছু নাই। চার দেয়ালের বক্স থেকে রেরুতে কাজ করছেন। শুধু বাসা নয়, হবে বাসস্থান; যেখানে একটি পরিবার বাস করবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম—এই ভাবনা রেখে কাজ করে আনোয়ার ল্যান্ডমার্ক। প্রতিটি প্রকল্পে খোলা জায়গায় ও বারান্দায় গাছ রাখার কথা ভাবে। রাখে খেলা ও নামাজের জায়গা।
কিভাবে ব্যবসার সাথে যুক্ত হরেন?
ক্লাস সিক্সেই ছোট আকারে ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হয়ে যাই। বাবা ছোটছোট অনেক কাজ শিখিয়েছেন। আব্বা মালিক হিসেবে আমাদের কম্পানিতে বসিয়ে দেননি। দশম শ্রেণীর ঘটনা, ক্রয় বিভাগে চাকরি করতাম। একটি কারাখানার স্থানান্তরের সময় বাবা অনেক মাল বিক্রির চেষ্টা করছিলেন। বাবা ডেকে বললেন, বিক্রি করতে পারলে পুরস্কার দিবেন। একটি মূল্য নির্ধারণের পর বিক্রির বাকি টাকা আমাদের টিমের। বাবার মালের মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রিতে সফল হয়েছিলাম। আমার ভাগে পড়ে লাভের প্রায় দু’লক্ষ টাকা। উনি শিখিয়েছেন কষ্ট করলে টাকা অর্জন করা যায় এবং টিমকে নিয়ে কাজ করলে সফলতা আরও অনেক বেশি।
আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাই।
ল্যান্ড প্রজেক্টে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে কিন্তু সেটা হয়ত আগামী পাঁচ বছর পরও চিন্তা করবো। ঢাকা এবং ঢাকার আশেপাশে আরওকন্ডোমেনিয়াম প্রজেক্টে যাবো। যেখানে কমপক্ষে ১৫শ থেকে দুহাজার অ্যাপার্টমেন্টর বাসস্থান হবে। এই মুহূর্তে প্রজেক্টস বাড়িয়ে ৫০শে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা রয়েছে।
সামাজিক কার্যক্রমে আপনারা কেমন ভূমিকা রাখছেন?
আনোয়ার গ্রুপ পুরনো ঢাকায় অনেকগুলো সিএসআর (করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি) প্রজেক্টেও সাথে জড়িত। গ্রুপ হিসেবে আনোয়ার ল্যান্ডমার্ক সেটার অংশীদার। অনেকগুলো প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা করি। মাদ্রাসা, এতিমখানার সাথেও জড়িত। এছাড়া পুরনো ঢাকায় চক্ষু হাসপাতাল, মাতৃসদন, ব্লাড ডোনেশন সেন্টার এবং বারডেমের সাথে ডায়বেটিস সেন্টার রয়েছে যেগুলোয় অর্থায়ণ রয়েছে।
শুরুর সময় এবং এখন আবাসন সেক্টরের পরিস্থিতি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
ক্রেতারদের অভিযোগ এবং সচেতনতা তখনও ছিল, এখনও আছে। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে রিহ্যাব হচ্ছে শীর্ষ সংগঠন। বাংলাদেশের এক তৃতীয়াংশ ডেভেলপার রিহ্যাবের সদস্য না। মূলত তাদের কারণে আবাসন সেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়। আর বদনাম সবার। এগুলো থেকে বের হতে আমরা চেষ্টা করছি। কিন্তু বিষয়টি সহজ নয়।
একদশকের দীর্ঘযাত্রায় আপনাদের অর্জন কি?
শুরুতেই আইএসও সার্টিফাইড ক’ম্পানি ও রিহ্যাবের সদস্য হয়ে গিয়েছিলাম। আমাদের কন্ট্রাকশনের কারণে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জনে সক্ষম হয়েছি। শুধু রিয়েলএস্টেট কাজই না সরকারের জন্যও বেশকিছু কাজ করে থাকি। যেমন চট্টগ্রামে কোরিয়ান কম্পানির সাথে যৌথভাবে ওয়াসার কাজ করছি। ভারতীয়দের সাথেও যৌথ প্রকল্প রয়েছে। এছাড়াও অনেক প্রজক্ট চলছে। সবচেয়ে বড় পাওয়া গ্রাহকদের আস্থা অর্জন। গ্রাহকের রেফারেন্সে নতুন গ্রাহক তৈরি পাওয় সবচেয়ে বড় পাওয়া। কাঁচামাল সরবরাহকারীদের আস্থা অর্জন করেছি। আমাদের টিম মেম্বার সবাই দীর্ঘদিন আমাদের সঙ্গে। তারা আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ।
গৃহায়নখাতে বর্তমান চ্যালেঞ্জ?
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত রিয়েল এস্টেট বা কনস্ট্রাকশন খাতকে একটি ইকোনোমিক ইনডিকেটর হিসেবে ধরা হয় না। কিন্তু প্রতিটি দেশে রিয়েল এস্টেট এবং কনস্ট্রাকশন খাত ইকোনমিক ইন্ডিকেটর। রিয়েল এস্টেট এবং কনস্ট্রাকশন সঙ্গে অনেক ইন্ডাস্ট্রি জড়িত। সরকারকে সেটা বিবেচনায় নিয়ে রিয়েল এস্টেট সেক্টরকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত নন-প্রোডাক্টটিভ খাত বলা হয়। অথচ সবচেয়ে বড় ম্যানুফাকচারিং খাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তারকাটা থেকে শুরু করে ইলেক্ট্রনিক্স পর্যন্ত এখাতের সাথে জড়িত। এখাতকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিতে সরকারের পদক্ষেপ নেয়া উচিত।
ঢাকাকে বাসযোগ্য কি করতে হবে?
বাংলাদেশকে ঢাকা থেকে বের করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা বিকেন্দ্রীভূত না করবো এবং চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট, বরিশাল, যশোরের মতো অন্যান্য ইকোনমিক অঞ্চলগুলোকে ডেভেলপ হবে না, কর্মসংস্থনের জন্য ঢাকাতে মানুষ আসবে। একইসঙ্গে স্বাস্থ্যসেবার এবং শিক্ষার মতো অন্যান্য খাতকে ঢাকার বাইরে নিয়ে যাওয়া। তিন কাঠায় একটা পরিবারের বদলে এখন আটটা পরিবার থাকলে পানি, বাতাস, সুয়ারেজ ক্ষতিগ্রস্থ হবেই। রেল যোগাযোগ আরও বাড়লে ঢাকাকে বাইরে নেয়া সম্ভব হবে। এটা অটোমেটিক হবে কারণ বাংলাদেশের রিসোর্স মধ্যে জমি প্রথম শেষ হবে। সেজন্য ঢাকার জমির দাম সবচেয়ে বেশি। আমরা ঢাকার জমি-অ্যাপার্টমেন্টের দাম নিউইয়র্কেও সাথে তুলনা করি। এটা কোন ছোট সমাধান নয়। সবাইকে সমষ্টিগতভাবে কাজ করতে হবে। এমআরটি এবং রেলের কাজগুলো হলে ঢাকাকে আরও বর্ধিত করা সম্ভব হবে। তখন মধ্যবিত্তদের ক্রয় ক্ষয়তার মধ্যে আরও বাসস্থান নির্মাণ সম্ভব হবে।
সংক্ষিপ্ত পরিচতি: হোসেন খালেদ
১৯৯৩ সালে হোসেন খালেদ এ’লেভেল শেষে একাউন্টিংয়ে ব্যাচেলর করতে আমেরিকা যান। ৯৭ সালে দেশে এসে এইচএসবিসি ব্যাংকে একবছর চাকরিও করেন। ৯৮ সালে আবার ব্যাংকিংয়ে মাস্টার্সে করতে যান। ২০০০ সালে বাংলাদেশে নিজেদের জুটমিলের দায়িত্ব নেন।
হোসেন খালেদ গত বছরের শেষের দিতে আনোয়ার ল্যান্ডমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব নিয়েছেন।
লেখা ও ছবি: সানজাদুল ইসলাম সাফা।