নেদারল্যান্ড শিশু দত্তকপ্রথা স্থগিত করে দিয়েছে বলে একটা পোস্টে দিয়েছিলাম পরশু রাতে। এরপর থেকে মনোরার ইনবক্স-তাড়া। এরই মধ্যে, সে বিশ্বাস করতে শুরু করেছে, তাকে হয় চুরি করা হয়েছে, নয় বিক্রি। এতোদিন মেয়েটার একটা বিশ্বাস ছিলো যে, বাবা মাকে সে খুঁজে পাবেই। কাল থেকে চরম হতাশ সে।
“আচ্ছা, এখন তো মনে হচ্ছে আমার নামটা আসল না। কি বলো? যারা আমাকে পাচার করেছে, এটা তাদের দেয়া হতে পারে না? আমাকে যদি স্বাভাবিকভাবে দত্তক দেয়া হতো, তাহলে তো আমার বাবা মায়ের নাম, তাদের ঠিকানা থাকতো দত্তকসম্পর্কিত কাগজপত্রে!”
মনোরা ২০০৫ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে বাবা মাকে খুঁজতে গেলে আমিও গিয়েছিলাম খুলনায়। অনেক অফিসে গিয়েও কোন তথ্য পাইনি তখন। এরপর, থেমে থেমে চেষ্টা করেছি বহুবার। লাভ হয়নি। মনোরা কিন্তু থেকে নেই। ডিএনএ পরীক্ষা থেকে শুরু করে নানা কায়দায় জন্মদাতা বাবা মায়ের খোঁজ পেতে মরিয়া এই সুইডিশ নাগরিক।
মনোরার কাছে থাকা একটা চিঠির সূত্র ধরে জানা যায়, ১৯৭৮ সালে খুলনায় একটি শিশু সদনে বাবা মা অভাবের তাড়নায় ফেলে যায় তাকে। খুলনা থেকে ঢাকায় এনে তাকে সুইডেনে পাঠানো হয়। স্বাধীনতার পর যুদ্ধশিশুদের বিদেশে দত্তক দেয়ার সুযোগ তৈরি হয়। সেটি একসময় রীতিমতো শিশু পাচারে পরিণত হয়। ১৯৭০ এর দশকের শেষার্ধে এসে এ বিষয়ে অনুসন্ধান করেছিলেন ডক্টর জ্যাক প্রেগার নামের এক ব্রিটিশ চিকিৎসক। তিনি দাবি করেছিলেন, টঙ্গীর একটি এনজিওতে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি শিশুপাচারে জড়িত। কিন্তু, এ অনুসন্ধানের কোন কিনারা সেসময় হয়নি। সম্প্রতি নেদারল্যান্ড সরকার দত্তকপ্রথা স্থগিত করে দিলে আবার আলোচনা আসেন ডক্টর প্রেগার। অনেকটা সত্য প্রমাণিত হয় তার দাবি। নেদারল্যান্ড বলছে, বাংলাদেশসহ আরো কয়েকটি দেশ থেকে শিশু দত্তক নেয়া হয়েছে চুরি, নয় কেনাকাটার মাধ্যমে। এর মানে, একাজে তখন একটা মাফিয়াতন্ত্র চালু হয়।
মনোরা কি সেই মাফিয়াতন্ত্রের শিকার?তাকে কি চুরি করা হয়েছে? নাকি, কৌশলে কিনে নিয়ে পাচার করা হয়েছে? প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়া কঠিন। কিন্তু মনোরার বাবা মাকে খুঁজে পাওয়া কি কঠিন? আমার তো মনে হয় সম্ভব। মনোরা তার বাবা মাকে খুঁজছে, এটা যদি ছড়িয়ে যায় অলিগলিতে, আকাশেবাতাসে, মনোরার বাবা মাকে খুঁজে বের করা সম্ভব। কেউ না কেউতো তার চুরি হওয়া বা বিক্রি হয়ে যাওয়া নিশ্চয় জানেন।
লেখক: সোহেল মাহমুদ, সম্পাদক, প্রবাসী টিভি।