শায়েস্তাগঞ্জে পানযোগ্য পানির সংকট

এমএইছ চৌধুরী জুনাইদ, (শায়েস্তাগঞ্জ), হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলাসহ আশপাশের বিস্তীর্ণ জনপদে পানযোগ্য পানির সংকট দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ধীরেধীরে নিচে নামতে থাকায় প্রতি বছরই এ সংকটে পড়তে হয় উক্ত এলাকার বাসিন্দাদের।

এই সংকটের সূত্রপাত হয়েছিল আজ থেকে ৮-১০ বছর পূর্ব হতে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমশ নিম্নগামী হওয়াতে এ সংকট দেখা দিয়েছে। প্রতি বছর নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাসে এখানে সাধারণ টিউবওয়েলের পানি হ্রাস পেতে থাকে। ফেব্রুয়ারী থেকে মার্চ মাসে উক্ত এলাকার অগভীর নলকূপগুলোর পানি প্রবাহ একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। ফলে উক্ত এলাকার বাসিন্দারা সুপেয় পানির অভাব অনুভব করতে থাকেন। এলাকাব্যাপী দেখা দেয় পানযোগ্য পানির মহাসংকট।

এ সময়ে ভূগর্ভস্থ পানিরস্তর নিম্নগামী হওয়ার অন্যতম কারন হচ্ছে গভীর নলকূপের মাধ্যমে ধান চাষসহ অন্যান্য ফসলী জমিতে পানি সরবরাহ। শীতকালীন রবি শস্যসহ বিভিন্ন ফসল চাষাবাদে প্রচুর পানি সরবরাহের প্রয়োজন হয়। তাই নদী নালা, খাল, বিল, পুকুরসহ সমস্ত জলাধারই প্রায় পানিশুণ্য হয়ে পড়ে, তাই ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনই হয়ে পড়ে একমাত্র উপায়।

পানযোগ্য পানির সংকট দূরীকরণে এলাকার সচ্ছল ব্যক্তিদের বাড়ির আঙ্গিনায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে ডিপ-টিউবওয়েল স্থাপন করা হয়েছে। এ সামর্থ্য অনেকেরই নেই। শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভাধীন মহলুল সুনামের বাসিন্দা ভূক্তভোগী তাফহিম চৌধুরী জানান, উনার বাড়ির অগভীর নলকূপটির পানি ইতোমধ্যে হ্রাস পেয়েছে, কখন বন্ধ হয়ে যায় এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। পানি সংকটে ভুক্তভোগী দাউদনগর গ্রামের আরেক বাসিন্দা তানবীর চৌধুরী জানান, উনার বাড়িতে ২৮০ ফুট গভীরতা সম্পন্ন টিউবওয়েলটির পানি প্রবাহ ইতিমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে যদি বৃষ্টিপাত না হয় তাহলে এ সংকট আরও প্রকট হবে। একই গ্রামের বাসিন্দা সৈয়দ নাঈম জানান, উনার অগভীর নলকূপটির পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়াতে তিনি পাশের বাড়ির গভীর নলকূপ থেকে পাইপ লাগিয়ে পানি এনে উনার পানি সংকট থেকে রক্ষা পেয়েছেন।

এমনিতেই অত্র এলাকায় পুকুরের সংখ্যা অপ্রতুল। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিম্নগামীতার সাথে পাল্লা দিয়ে কমতে থাকে পুকুরের পানিও। এ ধারা অব্যাহত থাকলে অচিরেই পরিবেশে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। উক্ত এলাকায় রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে প্রয়োজনীয় সংখ্যক গভীর নলকূপ স্থাপনের মাধ্যমে শায়েস্তাগঞ্জের এই পানযোগ্য পানির সংকট দূর করা সম্ভব বলে মনে করেন অত্র এলাকার সচেতন মহল ও ভুক্তভোগী জনসাধারণ ।