৫০ বছরেও মিলেনি চার শহীদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি

মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, (সেনবাগ), নোয়াখালী: ১৯৬৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি গণ আন্দোলনের (গণ অভ্যুত্থান) সময় তৎকালীর ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ডাকে নোয়াখালীর সেনবাগ থানায় কালো পতাকা উত্তোলন করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন চার জন।

গণ অভ্যুত্থানে নিহত এ চার শহীদ এবং আহতদের ৫০ বছরেও রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতির না মেলায় স্বীকৃতির দাবিতে মানববন্ধন করেছে সেনবাগের লেখক ফোরাম ও সেনবাগ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠন। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০ টা থেকে বেলার ১১টা পর্যন্ত আধাঘন্টা সেনবাগ থানা মোড়ে সড়কে ওই মানববন্ধন কর্মসূচীটি পালন করা হয়। এসময় বিপুল সংখ্যক বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার লোকজন অংশ গ্রহণ করে। পুলিশের গুলিতে নিহত চার শহীদ হলেন, উপজেলার অর্জুনতলা গ্রামের শহীদ অফিজের রহমান, বাবুপুর গ্রামের শহীদ আবুল কালাম আজাদ, জিরুয়া গ্রামের শহীদ সামছুল হক ও মোহাম্মদপুর গ্রামের শহীদ খুরশিদ আলম।

মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা জানান, ১৯৬৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারী আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রতিবাদে দেশব্যাপী যখন আন্দেলন ভয়াবহ রূপ লাভ করে তখন ১৫ ফেব্রুয়ারী কারা অভ্যন্তরে সার্জেন্ট জহুরুল হককে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এর প্রতিবাদে সারাদেশের ন্যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বিক্ষোভে ফেঁটে পড়লে তখনকার প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে। ওই সময় ১৮ ফেব্রুয়ারী পুলিশের গুলিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহা নিহত হয়। তখন ১৯ ফেব্রুয়ারী ড. শামসুজ্জোহা নিহতের প্রতিবাদে তৎকালীন সেনবাগ ছাত্র-সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে সেনবাগ থানায় কালো পতাকা উত্তোলন করতে গেলে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালান, পুলিশের গুলিতে শহীদ হন তিন ছাত্রসহ চার যুবক ও আহত হন ১৫ থেকে ২০জন।

ঘটনার পর একে একে ৪৮টি বছর পেরিয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত ৬৯-এর সেই ঘটনায় নিহত ও আহতদের পরিবার পায়নি কোন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এবং তাদের পরিবারগুলো পাননি কোন রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা। প্রতিবছর সার্জেন্ট জহরুল হক ও ড. সামসুজ্জোহা মৃত্যু দিবস পালন করা হলেও সেনবাগের চার শহীদের খোঁজ কেউ রাখেনা। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নোয়াখালীর সেনবাগে এসে নিহত চার শহীদের কবর জিয়ারত করেন এবং ওই পরিবারের লোকজনের মাঝে ৫শত টাকা ও একটি করে
সনদপত্র দেন। দীর্ঘদিন থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারীকে সেনবাগে ৪ শহীদ দিবস ঘোষণা করার দাবীতে এখানকার সর্বস্তরের লোকজন সভা-সমাবেশ ও মানববন্ধন সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে।

তৎকালীর সেনবাগ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা শহীদের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ববাবরে চিঠি লিখেন। গত ২০১২সালের ২২ জানুয়ারি তারিখে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রলালয়ের পরিকল্পনা শাখার সিনিয়র সহকারী প্রধান মুহাম্মদ নুরুল আমিন খান স্বাক্ষরিত এক পত্রে চার শহীদ স্মরণে সেনবাগ থানা চত্বরে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এর প্রধান প্রকৌশলী বরাবর চিঠি প্রেরণ করেন। কিন্তু ৭ বছর গত হতে চললেও এখন পর্যন্ত এর নির্মাণকাজ কাজ শুরু হয়নি।