জাকির হোসেন, (শার্শা) যশোর: তামান্না আক্তার নুরা ২০১৯ শিক্ষাবর্ষে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। সে অন্য সকল ছাত্র-ছাত্রীদের মতো হাত দিয়ে নয়, একমাত্র পা দিয়ে উত্তরপত্র লিখছে। যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া ইউনিয়নের আলিপুর গ্রামের রওশন আলীর মেয়ে তামান্না আক্তার নূরা। তার একটি পা ও দুটি হাত নেই । সে একটিমাত্র পা দিয়ে চলমান এসএসসি পরিক্ষা দিচ্ছে।
ছোটবেলা থেকে পড়াশুনার প্রতি অধিক আগ্রহ ছিলো তার। অদম্য ইচ্ছাশক্তির কাছে হার মানতে বসেছে সব প্রতিবন্ধকতা। তাকে দেখলে অনেক কষ্ট লাগে সকলের। কিন্তু এসবে ভ্রুক্ষেপ নেই তার। তার ইচ্ছা শক্তি অনেক দৃঢ়। একটি মাত্র পা-ই এখন তার ‘স্বপ্নপূরণের হাতিয়ার’। চলতি এসএসসি পরীক্ষায় ঝিকরগাছার বাঁকড়া জে কে হাই স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে তামান্না। স্থানীয় বাঁকড়া ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসেই পরীক্ষা দিচ্ছে সে। পরিবার, শিক্ষক, সহপাঠীদের ধারনা, প্রাথমিকে বৃত্তি ও জেএসসি’র ধারাবাহিকতা রক্ষা করে এসএসসিতেও ভালো ফলাফল করবে তামান্না।
তামান্নার শিক্ষক ও সহপাঠীরা বলেন, শারীরিক এই প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে তামান্না কেজি, প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণির প্রতিটি ফলাফলে মেধা তালিকায় প্রথম হয়েছে। পাশাপাশি ‘এডাস বৃত্তি পরীক্ষায়’ প্রতিবছরই বৃত্তি পেয়েছে। এছাড়াও ২০১৩ সালে পিইসি এবং ২০১৬ সালে জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে তামান্না। সে ভালো লেখাপড়ার পাশাপাশি এক পায়ে ছবিও আঁকে। এসব কিছুর পেছনে আছে তার মা-বাবার মরিয়া চেষ্টা, আর নিজের অদম্য ইচ্ছাশক্তি।
তামান্নার বাবা রওশন আলী বলেন, প্রতিবন্ধী মেয়ে জন্ম নেয়ার খবর পেয়ে বিদেশ থেকে চাকরি ছেড়ে বাড়ি চলে আসি। জন্মের পর থেকে অর্থাভাবের পাশাপাশি সামাজিকভাবে অনেক প্রতিকূলতা মোকাবেলা করতে হয়েছে আমার মেয়েকে। তবে কখনও আমরা ভেঙে পড়িনি। সৃষ্টিকর্তার ওপর ভরসা করেই তামান্নার মা খাদিজা পারভীন শিল্পী তাকে একটি পায়ের উপর ভর করে সব ধরনের শিক্ষা দিতে থাকে। তামান্নার মা খাদিজা পারভীন জানান, প্রথমে তাকে এলাকার একটি স্কুলে ভর্তি নিতে চায়নি। তাতে তারা থেমে যাননি। অক্ষর লেখা, পায়ের আঙুলের ফাঁকে চক ধরিয়ে লেখা, তারপর কলম ধরিয়ে লেখা আয়ত্ব করে সে। ধীরে ধীরে বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টানো, পায়ের আঙুলের ফাঁকে চামচ দিয়ে খাওয়া, চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ানো সবই সে আয়ত্ব করে ফেলে। তার দক্ষতা সবার নজরে আসে। যখন তাকে ভর্তি করতে চায়নি, তখন এগিয়ে আসে স্থানীয় আজমাইন এডাস স্কুল কর্তৃপক্ষ। তারা সানন্দে মেয়েটিকে ভর্তি করে নেয়। এরপর থেকে হুইল চেয়ারে করে তামান্নাকে স্কুলে আনা-নেয়া করেন তার বাবা।