নাটোর: নাটোর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ও সাবেক ছাত্রলীগকর্মী জামিল হোসেন মিলনকে উদ্ধারের দাবিতে তৃতীয় দিনের মত মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ। রবিবার বিকেল ৪টা থেকে দেড় ঘণ্টাব্যাপী নাটোর প্রেস ক্লাবের সামনে সর্বস্তরের জনসাধারণের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ মোর্তজা আলী বাবলু, দপ্তর সম্পাদক দিলীপ কুমার দাস, নাটোর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন বিপ্লব, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল্লাহ আল সাকিব বাকী, মহিলা নেত্রী বিউটি বেগম প্রমুখ।সমাবেশে জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ মোর্তজা আলী বাবলু বলেন, প্রায় ৪দিন হয়ে গেল মিলন নিখোঁজ। এই কয়দিনেও কেউই মিলনের কোনো খোঁজ দিতে পারছেন না। আমরা যখন যে তথ্য পাচ্ছি সাথে সাথে পুলিশকে জানিয়ে দিচ্ছি। অথচ নাটোরের পুলিশ সহ অন্যান্য সংস্থা কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। তিনি প্রশ্ন রাখেন তাহলে কি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা চাচ্ছেন না মিলনকে তার বাবা মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিতে। তিনি বলেন, মিলনকে তুলে নিয়ে যাওয়ার যে মোবাইলটি ব্যবহার করতেন সেই মোবাইল থেকে বিভিন্ন সময়ে মিলনের আত্মীয় স্বজনের কাছে চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। আমরা সেগুলো আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানিয়েছি। তিনি অভিযোগ করেন, দু’দিন ধরে এই স্বশন্ত্র বাহিনীর লোকজন লাঠি নিয়ে মহাসড়কে মোটর সাইকেল মহড়া দিয়ে আতঙ্ক তৈরি করছেন। আমরা শান্তিকামী মানুষ । নিয়মতান্ত্রিকভাবে মিলনকে ফিরে পাবার দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছি। মিলনকে ফিরিয়ে না দেয়া পর্যন্ত আমাদের এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
সমাবেশে দপ্তর সম্পাদক দিলিপ কমুার দাস বলেন, বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার রয়েছে আইনগত সহায়তা পাবার। মিলন যদি খারাপও হয় কারো অধিকার নেই তাকে হত্যা করার অথবা জিম্মি করার। তা না করা হলে সেটি সংবিধানের লংঘন। তাই আমরা অবিলম্বে মিলনকে সুস্থ অবস্থায় তার বাবা মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাই।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (৩১ জানুয়ারি) মধ্যরাতে নাটোর শহরের তালতলা হাফরাস্তা এলাকার নিজ অফিসের সামনে থেকে জামিল হোসেন মিলনকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায় র্যাব পরিচয় দেওয়া সাদা পোশাকের এক দল মানুষ। এর পর এখন পর্যন্ত তাঁর কোনো সন্ধান দিতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মিলনের বাবা এমদাদুল হক মিয়াজী নাটোর প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এবং নাটোর থানায় দায়েরকৃত জিডিতে অভিযোগ করেন, র্যাব পরিচয়ে সাদা পোশাকের একটি দল বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে তাঁর ছেলেকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর দিন শুক্রবার সকাল থেকেই দফায় দফায় সড়ক অবরোধ করে এলাকাবাসী। পরে প্রশাসনের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নিলেও দুপুরের পর থেকে পুনরায় বড় হরিশপুর বাস টার্মিনাল এলাকা অবেরোধ করা হয়। যাত্রীদের পোহাতে হয় অসহনীয় দুর্ভোগ। পরে প্রশাসনের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে অবেরাধ প্রত্যাহার করা হয়। এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোর্তজা আলী বাবলু আলটিমেটাম দিয়েছিলেন, রবিবার ভোর ৬টার মধ্যে মিলনকে সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে না দিতে পারলে তাঁরা আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন। এরই ধারাবাহিকতায় এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।
অন্যদিকে র্যাব ও পুলিশের পক্ষ থেকে মিলনকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলা হয়, মিলনকে উদ্ধারে তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। নাটোর থানার ওসি কাজী জালাল উদ্দিন জানান, পুলিশ তাঁর ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছে। জিডির তদন্ত কর্মকর্তা নাটের থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই আকিবুল ইসলাম বলেন, জিডি পাওয়ার পরপরই আমরা জামিল হোসেন মিলনের সিডিআর (মোবাইল ফোনের কল ডিটেইলস রেকর্ড) তলব করেছি। এ ছাড়া তাঁকে কোন কোন জায়গায় নিয়ে রাখা হতে পারে, আমরা সম্ভাব্য সেসব স্থানে খোঁজখবর নিচ্ছি। নাটোর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত জানান, পুলিশ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে। তবে এই মুহুর্তে বলার মত অগ্রগতি হয়নি।অপরদিকে এ বিষয়ে নাটোর র্যাব সিপিসি-০২ এর কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহেদ শাহরিয়ার বলেন, র্যাবের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সঠিক নয়। তাাঁরা বিষয়টি জানার পরে ইন্টারনালি তদন্ত শুরু করেছেন। ঢাকা থেকেও উচ্চ পর্যায়ের একটি টিম নাটোরে এসেছে। মিলনকে খুঁজে বের করতে তাঁরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।