সুফি সান্টু, নাটোর: শুক্রবার নাটোরে যুবলীগ সভাপতি হাসান আলী খাঁকে (২৪) কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে নাটোর-পাবনা মহাসড়ক অবরোধ করে এলাকাবাসী। পরে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আওয়ামীলীগ নেতা শফিকুল ইসলাম শিমুলের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
অপরদিকে হাসান আলীর মরদেহ রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে নিয়ে এসে শুক্রবার বাদ আসর দাফন করা হয়। শুক্রবার দুপুরে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে নিহত হাসানের লাশ নিজ বাড়িতে নিয়ে আসা হলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন নিহতের স্বজনরা। পরে বিক্ষিদ্ধ জনতা নাটোর -ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। ফলে দূরপাল্লার যানবাহন সহ সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। সংবাদ পেয়ে নাটোর -০২ আসনের সংসদ সদস্য ও নাটোর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ঢাকা থেকে দুপুরে দত্তপাড়ায় আসেন। এসময় তিনি নিহত হাসানের পরিবারকে শান্তনা দিয়ে বলেন, হত্যাকারী যেই হোক তার বিচার করা হবে। পরে বাদ আসর নামাজে জানাযা শেষে ফতেঙ্গাপাড়া কবর স্থানে হাসানের লাশ দাফন করা হয়। এসময়ে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা সহ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকেন।
এদিকে শুক্রবার বিকেলে নিহত হাসানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়,পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে হাসান ছিলেন চতুর্থ সন্তান। বুক চাপড়ে কাঁদছেন হাসানের স্ত্রী আয়েশা বেগম। বড়বোন হাসিনা বেগম ভাইয়ের শোকে কাঁদতে কাঁদতে মূর্ছা যাচ্ছেন। মা হাজেরা বেগম ছেলের মৃত্যুতে ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন। আর শৈশব থেকে সন্তানের স্নেহে দেবর হাসানকে লালন-পালন করা ভাবী আলেয়া বেগমের বিলাপ ভারী করে দিচ্ছে আশপাশের পরিবেশ। হাসানের বড়ভাই শহীদুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেলে দত্তপাড়া বাজারে একটি চা দোকানে এসে বসলে পেছন থেকে কুপিয়ে হাসানকে গুরুতর আহত করে সজীব ও সোহান। পরে হাঁসুয়া উচিয়ে বীরদর্পে বাজার থেকে বেরিয়ে পড়েন তারা। ভরা বাজারে এসময় হাসান আলীকে বাঁচাতে কেউ এগিয়ে আসেনি। ভাই হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে তিনি বলেন, সেন্টু বাহিনীর কাছে জিম্মি হয়ে রয়েছে দত্তপাড়া বাসী। সেন্টু সহ তার ভাইয়ের হত্যাকারীরা এমন কোন অপকর্ম নেই যা এলাকায় করে না। তিনি প্রধানমন্ত্রী ও প্রশাসনের নিকট ইউপি সদস্য সেন্টু ও তার দুই সহযোগির দুঃশাসন থেকে দত্তপাড়াবাসীকে বাঁচানোর দাবি জানান।
নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আবুল হাসনাত বলেন, হত্যাকান্ডের সাড়ে জড়িতদের দুইজন একটি হত্যা মামলারও আসামী। সম্প্রতি জামিনে মুক্ত হয়ে এলাকায় এসে পুনরায় এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে তারা। ঘটনার পর থেকে তারা পলাতক রয়েছেন। তাদের খুঁজতে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে। এ বিষয়ে নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী জালাল উদ্দিন আহমেদ জানান, অগ্নিসংযোগের পর থেকে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন আছে। দীর্ঘদিনের ব্যক্তিপর্যায়ের বিরোধের কারণে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। তবে হাসান হত্যা ঘটনায় প্রতিবেদন তৈরি পর্যন্ত (রাত পৌনে ৮টা) নাটোর সদর থানায় মামলা হয়নি।
উল্লেখ্য, পূর্ব বিরোধের জেরে নাটোরের দত্তপাড়ায় ১নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি হাসান আলী খাঁকে (২৪) কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে নাটোর শহরের অদূরে দত্তপাড়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। নিহত হাসান আলী সদর উপজেলার দত্তপাড়া এলাকার মোংলা খাঁ এর ছেলে। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে হাসানের বামহাত প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং পেট ও পায়েও উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করা হয়।