গম চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন যশোরের কৃষকরা

জাকির হোসেন, (শার্শা) যশোর: বাংলার কৃষকদের ধানের পাশাপাশি গম চাষের যে প্রবনতা দিন দিন কমে যাচ্ছে। অভাবনীয় পুষ্টিগুণে ভরা এই ফসল দিয়ে তৈরি করা যায় বিভিন্ন প্রকারের খাদ্যদ্রব্য। চিকিৎসকরা বলেন, গম দিয়ে তৈরী হয় রুটি, বিস্কুট, কেক সহ নান রকম খাদ্য। এটি শরীরের জন্য খুব প্রয়োজনীয় একটি খাবার।

গম চাষ একটি লাভ জনক ফসল হলেও বর্তমান সময়ে এটি চাষের প্রতি মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন চাষীরা। যে গম দেশের মাঠে প্রান্তরে ব্যাপক ভাবে চাষ হতো সেই গম চাষের প্রতি অনীহা দেখা দিয়েছে চাষীদের মাঝে। গম চাষে ব্যাপক বিস্তার লাভ করা উৎপাদনশীল ফসলটি আজ চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এই গমই চাষের মধ্যে দেশে দানা ফসল হিসেবে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে। আর আজ ক্রমেই এই গম চাষ ব্যাপক ভাবে হ্রাস পেয়েছে। গত কয়েক বছর পিছনের দিকে লক্ষ্য করলে আমরা দেখত পাই গম চাষের ব্লাষ্ট ভাইরাস কতটা ক্ষতি করেছে এই গম চাষে। চলতি বছরে যশোরের শার্শা উপজেলায় গমের আবাদ হচ্ছে মাত্র ৭ হেক্টর জমিতে। বিগত কয়েক বছর আগে এই উপজেলাতে গম চাষ হয়েছে ৫শ হেক্টরের উপরে। যা তারও আগে ১ হাজার হেক্টর ছাড়িয়ে ছিল।

গম চাষের প্রতি চাষীদের চলতি গম আবাদে এক প্রকার নিরুৎসাহিত করছেন বলে জানান স্থানীয় কৃষি বিভাগ। কৃষি বিভাগ সুত্রে জানা যায়, যশোরের শার্শা উপজেলা কৃষি পণ্য উৎপাদন হিসেবে এক সময় বিখ্যাত ছিলো। বছরের বিভিন্ন সময়ের নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও সব সময় ব্যস্ত থাকতো কৃষি কাজে এখানকার কৃষকরা। এই উপজেলার চাষীদের চাষযোগ্য ফসলের অন্যতম একটি ফসল হিসেবে ছিল এই গমের আবাদ। কিন্তু হঠাৎ করেই গত কয়েক বছর ধরেই ব্যাপক ভাটা পড়ে গম চাষে। গমে ক্ষতিকর ব্লাষ্ট ভাইরাস লাগায় ব্যাপক ভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়ে এই উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গার চাষযোগ্য অঞ্চল। প্রথম অবস্থায় ক্ষতিটি পুশিয়ে নিয়ে পুনরায় পরের বছর আবারো গম চাষ করে একই ভাবে আর্থিক ও মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েন কৃষকরা। গম চাষে মন্দা ভাবের কারনে এটি চাষের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন গম চাষীরা। তারপর থেকে গম চাষ থেকে একেবারেই বিরত থাকতে অনুরোধ করেন কৃষি বিভাগ।

পরপর কয়েক বছর এ চাষের থেকে বিরত থাকার পর আবারো এই উপজেলায় গম চাষ শুরু হয়েছে। যা ১শ শতাংশের মধ্যে ১০ শতাংশেরও কম। চলতি গম আবাদ মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং কোন রকম ব্লাষ্ট ভাইরাস না থাকায় গম আবাদ ভালো হয়েছে এবং চাষীরা লাভবান হবে বলে জানান কৃষি বিভাগ। পাশাপাশি এখনো কোন রকম ঝুঁকি না নিয়ে এ বছরও গম চাষীদের নিরুৎসাহিত করছেন কৃষি কর্মকর্তারা। গম চাষীরা জানান, শত বাঁধা বিপত্তি ভয় ও নানাবিধ প্রতিকুলতাকে দুরে ঠেলে আমরা গম চাষ করেছি। কোন রকম দুর্যোগ না আসলে আশা করছি ভালো ফসল ঘরে তুলতে পারবো পাশাপাশি লাভের মুখ দেখবো।

শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সৌতম কুমার শীল জানান, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় ৭ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়েছে। বিগত বছরে গমে ব্লাষ্ট ভাইরাস লাগার কারনে কৃষকদের গম আবাদ থেকে নিরুতসাহিত করেছি এবং এখনও করছি যার কারনে চলতি ২০১৯ সালে গমের আবাদ পুরোপুরিভাবে কমে গিয়ে মাত্র ৭ হেক্টর জমিতে কৃষক গমের আবাদ করছে। ভাইরাস এখন পর্যন্ত দেখা দেয় নি, যদি না দেখা দেয় তাহলে আবারো আগামী বছর থেকে আশা করছি কৃষকরা এ চাষের উপর মনোযোগী হবে। আমি এবং আমার কৃষি বিভাগ সর্বদাই গম চাষীদেরকে সঠিক পরিচর্যা পরামর্শ প্রদান ও সহযোগিতা করছি। আশা করি এ বছর গমের আবাদ ভাল হবে।