বঙ্গবন্ধুর খুনি ক্যাপ্টেন মাজেদ কোলকাতার পার্কস্ট্রিটের বেডফোর্ড লেনের একটি ভাড়া বাড়িতে বসবাস করতেন আহমেদ আলি নামে।তিনি পাশের তালতলা এলাকায় ২৫ লাখ টাকায় একটি ফ্ল্যাটও কিনেছেন! ফ্ল্যাটে ওঠার আগেই তাকে বাংলাদেশে ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে হবে, সেটা কে জানতো!
বঙ্গবন্ধুর খুনি ক্যাপ্টেন মাজেদ তথা আহমেদ আলি বাস করতেন ভারতীয় হিসেবেই। তার ছিল আধার কার্ড ভোটার আইডি কার্ড রেশন কার্ড ও ভারতীয় পাসপোর্ট। সেই সাথে কোলকাতা মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের BPL Household তালিকায় ছিল তার নাম! BPL তালিকা তথা Below Proverty Line তালিকায় যাদের নাম থাকে তারা দরিদ্র সীমার নিচে থাকা পরিবার; সেইসব পরিবার সরকারের কাছ থেকে পায় বিশাল আর্থিক সুবিধা! যেখানে খোদ ভারতীয় নাগরিককেরাও সেই তালিকায় নাম ওঠাতে পারেন না, সেই তালিকায় বাংলাদেশি এক দুর্ধর্ষ খুনির নাম রয়েছে, সেটা ভারতীয়রা স্বপ্নেও ভাবতে পারেন না! ২০১৭ সালের ২৪ মে ওই পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়েছে, তার মেয়াদ ১০ বছর; মেয়াদ শেষ হবে ২০২৭ সালের ২৩ মে! তার পাসপোর্ট নম্বর R 0465602।
যেখানে খোদ ভারতীয়রা পাসপোর্ট করতে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে বাংলাদেশের নাগরিক ও বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি ক্যাপ্টেন মাজেদ আসল পরিচয় গোপন করে ভারতীয় হিসেবে আহমেদ আলি নামে পাসপোর্ট পেয়ে যান, সেটা শুধু বিস্ময়েরই নয়, অবিশ্বাস্যও বটে! কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, তিনি সেই বিস্ময়কর ও অবিশ্বাস্য কাজ নিজে করে দেখিয়েছেন! পাসপোর্টের পুলিশ ভেরিফিকেশনের কাজটি যে কতো জটিল, সেটি শুধু ভারতীয়রাই জানেন! এটা নিশ্চিত যে, এখানে এক কিংবা একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তির সান্নিধ্যে ছিলেন খুনি মাজেদ! নইলে আধার কার্ড ভোটার আইডি কার্ড রেশন কার্ড পাসপোর্ট পেয়ে যাওয়া এবং কোলকাতা মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের BPL Household তালিকায় নাম ওঠানো অসম্ভব! কে কিংবা কারা সেই প্রভাবশালী ব্যক্তি, সেটি হয়তো এখনই জানার নয়; সময় একদিন সব সত্যকে সামনে নিয়ে আসবে।পার্ক স্ট্রিটের বেডফোর্ড লেনের ভাড়া বাড়িতে থাকতেন বঙ্গবন্ধুর ঘাতক আব্দুল মাজেদ।’
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক সূত্র জানিয়েছে, ২০১৭ সালে ওই পাসপোর্ট বানানো হয়েছে। নিয়ম মেনে পার্ক স্ট্রিট থানা পুলিস ভেরিফিকেশন করার পর পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়েছে। পাসপোর্টে জন্মস্থান হিসেবে হাওড়া উল্লেখ করা হয়েছে। সত্যি কথা বলতে কী, ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণের সব কাগজপত্রই ছিল মাজেদের। আধার কার্ডও বানিয়েছেন অনায়াসে। তাঁর আধার কার্ড নম্বর হল ৭৯৪১ ৯৫৯১ ২৮৬৪। এছাড়াও ২০১২ সালে মাজেদ সচিত্র ভোটার কার্ড বানিয়েছিলেন।আব্দুল মাজেদ ২০১১ সালে তাঁর থেকে ৩২ বছরের ছোট উলুবেড়িয়ার সেলিনা বেগমকে বিয়ে করেন। তাঁদের ছয় বছরের এক মেয়ে আছে।মাজেদের স্ত্রী সেলিনা ওরফে জরিনা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, ঘড়ির কাঁটা মিলিয়ে চলতেন মাজেদ। এমনকী খেতে দিতে সামান্য দেরি হলে রেগে আগুন হয়ে যেতেন তিনি।
কিছুদিন ধরেই মাজেদের শরীরটা ভালো যাচ্ছিল না। গত জানুয়ারি মাসে কলকাতায় পিজি হাসপাতালে তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করান। গত ২২ ফেব্রুয়ারি পিজি হাসপাতাল থেকে রিপোর্ট আনতে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর আর ফেরেননি। কলকাতায় মাজেদের স্ত্রী (সেলিনা বেগম) ২২ ফেব্রুয়ারি রাতে পার্ক স্ট্রিট থানায় নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে ডায়েরি করেন। এরপর পার্ক স্ট্রিট থানা পিজি হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ ঘেঁটেও মাজেদের খোঁজ পায়নি। তবে পুলিশ মাজেদের ভাড়া বাড়ি থেকে একটি ব্যাগ পায়। সেই ব্যাগে তল্লাশি চালিয়ে সিম কার্ড, আধার কার্ড, ভোটার আইডি কার্ড, ভারতীয় পাসপোর্ট এবং এক মহিলাসহ তিন শিশুর ছবি পায়। কলকাতায় থাকার সময় দুটি নম্বরে প্রতিদিন নিয়মিত ফোন করে বাংলাদেশে কথা বলতেন বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী আব্দুল মাজেদ। নম্বর দুটি হল +৮৮০১৫৫২৩৮৭৯১৩ এবং +৮৮০১৭১১১৮৬২৩৯।
সম্ভবত এই ফোনে কথা বলাই কাল হয়ে দাঁড়াল তাঁর জীবনে! আর তার জেরেই নাকি তদন্তকারীদের হাতে আসে মাজেদ। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের অনুমান, বাংলাদেশে থাকা মাজেদের পরিবারের সদস্যদের ফোনে নিয়মিত আড়ি পাততো গোয়েন্দারা। ফলে মাজেদ কোথায় লুকিয়ে রয়েছে, সেই তথ্য সহজেই জেনে যায় তারা। এরপরই তাকে গ্রেফতারের ব্লু-প্রিন্ট তৈরি হয়। মাজেদ নিখোঁজ রহস্যের তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা সিসিটিভির ফুটেজ খতিয়ে দেখে নিশ্চিত হয়েছেন যে, বেডফোর্ড লেনের বাড়ি থেকে বেরনোর পর তাঁকে কেউ জোর করে অপহরণ করেনি। তেমন হলে চিৎকার কিংবা ধস্তাধস্তির প্রমাণ থাকত। তাছাড়া একজন হলেও প্রত্যক্ষদর্শী পাওয়া যেত। এর মানে মাজেদ স্বেচ্ছাতেই ওই চার ষণ্ডামার্কা লোকের সঙ্গে গিয়েছিলেন। তবে কি সেদিন মাজেদের পরিচিত কাউকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন গোয়েন্দারা? গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, এমনিতে সুদের কারবার ও টিউশনির টাকায় সংসার চললেও সম্প্রতি তালতলা এলাকায় ২৫ লাখ টাকা দিয়ে একটি ফ্ল্যাট বুক করেছিলেন মাজেদ। সূত্র: www.aajbangla.in