দুর্নীতি দমন কমিশন সরকারের বিভিন্ন দফতরে দুর্নীতি প্রতিরোধে যেসব সুপারিশ বা পরামর্শ পাঠিয়েছে তার বাস্তবায়ন কার্যক্রম ফলো আপ করবে। বুধবার দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিশনের অনির্ধারিত জরুরি সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভার শুরুতেই দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, কমিশন কর্তৃক বাস্তবায়িত গণশুনানির ওপর করা এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানা গেছে ‘ফলো আপ’ গণশুনানি বাস্তবায়ন করায় গণশুনানি এখন দুর্নীতি প্রতিরোধে একটি অন্যতম কার্যকর উপায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ‘ফলো আপ’ কার্যক্রম শুরু করা আগে যে সব গণশুনানি হয়েছে তা ততটা কার্যকর হয়নি। ফলো আপ গণশুনানি বাস্তবায়ন করার মাধ্যমেই এ কর্মসূচি ফলপ্রসু হয়েছে।
যুব বিশ্বকাপে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ
তিনি বলেন, কমিশন দুদক আইন অনুসারে বিগত চার বছর নিয়মিতভাবে মহামান্য রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে সরকারের নিকট কমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদনে দুর্নীতি-অনিয়ম প্রতিরোধে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে সুপারিশ পেশ করছে । এছাড়াও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণায়ল, বিভাগ ও সংস্থায় বিদ্যমান দুর্নীতির সম্ভাব্য উৎস চিহ্নিত করে তা বন্ধে বহুমাত্রিক সুপারিশ প্রেরণ করা হচ্ছে । কখনও কখনও বিভিন্ন অনিয়ম চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়।
দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধে কমিশন কর্তৃক গঠিত বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক টিমের প্রতিবেদন, বার্ষিক প্রতিবেদন সন্নিবেশিত সুপারিশমালা, দুর্নীতি প্রতিরোধে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে যেসব প্রতিবেদন, পত্র প্রেরণ করা হচ্ছে তা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দুদকের একজন মহাপরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তা নিয়মতি যোগাযোগ করবেন এবং বাস্তবায়ন কার্যক্রমের অগ্রগতি কমিশনকে রিপোর্ট আকারে অবহিত করবেন।
তিনি বলেন, সাধারণত কমিশনের অভিজ্ঞ কর্মকর্তাগণ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান আইন, বিধি-বিধান, পরিচালন পদ্ধতি, সরকারি অর্থ অপচয়ের দিকসমূহ পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে উক্ত প্রতিষ্ঠানের সীমাবদ্ধতা, প্রতিবন্ধকতা, দুর্নীতির সম্ভাব্য উৎস ও তা প্রতিরোধের নিমিত্ত বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশমালা প্রণয়ন করে। কমিশন সর্বোচ্চ শ্রম ও মেধা দিয়ে এসব প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে অনুমোদন দেয়। দুর্নীতি প্রতিরোধে এসব রিপোর্টের সুপারিশমালা বাস্তবায়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু এগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না তার সঠিক চিত্র আমাদের কাছে নেই। হয়তো কিছু কিছু বাস্তবায়ন হচ্ছে আবার কিছু কিছু হয়তো হচ্ছে না। তাই এগুলো বাস্তবায়নে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
তিনি দুদক সচিবের নেতৃত্বে একটি টিম গঠনের অনুরোধ জানিয়ে বলেন , এই টিম এক মাসের মধ্যে বিগত চার বছরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে যেসব পত্র/ সুপারিশ পাঠিয়েছে তার একটি পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেজ কমিশনের উপস্থাপন করবে।
তিনি বলেন, দুদক বহুসংখ্যক অভিযোগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়/ বিভাগে প্রেরণ করে থাকে । এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগ কর্তৃক গৃহীত কার্যক্রমও কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাপরিচালকগণ কমিশনকে নিয়মিত অবহিত করবেন।
তিনি বলেন, দুদক পদ্ধতিগত সংস্কারের মাধ্যমে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে এসব কাজ করছে। এসব সুপারিশমালা ফেলে রাখার কোনো সুযোগ নেই। আমরা বিশ্বাস সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো এসব বিষয় আমলে নিয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধে পদ্ধতিগত সংস্কারে কমিশনের এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে আন্তরিকতার সাথে সমন্বিতভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। দুর্নীতি প্রতিরোধে সমন্বিত উদ্যোগের কোনো বিকল্প নেই।
অনির্ধারিত এই জরুরি সভায় অন্যন্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দুদক কমিশনার ড. মোঃ মোজাম্মেল হক খান, কমিশনার এ এফ এম আমিনুল ইসলাম, সচিব মুহাম্মদ দিলোয়র বখ্ত প্রমুখ। এসময় কমিশনের সকল মহাপরিচালক, পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
প্রবাসী টিভির ইউটিউব চ্যানেলে যোগ দিতে এখানে ক্লিক করুন।