করোনাভাইরাস কী ভাবে ছড়াচ্ছে? লক্ষণ ও চিকিৎসা কী?

করোনা ভাইরাস মানছে না কাঁটাতার। রোগের সূত্রপাত চিনে হলেও বিশ্বের নানা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে আতঙ্ক। সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে নানা গুজব। অনেক ষড়যন্ত্রের খবর পাওয়া যাচ্ছে ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপে।

সংক্রমণের উৎস

করোনাভাইরাসের কারণ হিসেবে বিজ্ঞানী ও ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা এখনও নিশ্চিত ভাবে কোনও বিষয়কে চিহ্নিত না করলেও কয়েকটি দাবি সামনে এসেছে।

  • এই ধরনের ভাইরাসের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় ‘ফ্রুট ব্যাট’-দের শরীরে। চীনে এই ধরনের বাদুড়দের স্যুপ রান্নার অন্যতম উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয় এবং তা বেশ জনপ্রিয় একটি খাদ্য।
  • বাদুড় খায় এমন সাপের শরীরেও এই ভাইরাস ঢুকে পড়ে। সেই সাপ চীনে মাছের বাজারে বিক্রি হয়। সাপও সেখানকার অতি জনপ্রিয় একটি খাদ্য। তেমন সাপ খেলেও শরীরে প্রবেশ করতে পারে করোনাভাইরাস।
  • এই ধরনের সাপ বা বাদুড় ধরা, জবাই করা বা খাওয়ার সময় শ্বাসের মাধ্যমে এই ধরনের ভাইরাস মানবদেহে প্রবেশ করে। তাদের রক্তের সংস্পর্শে এলে বা শ্বাসের মাধ্যমে তা ছড়িয়ে পড়ে অন্য মানুষদের মধ্যে।
  • এমনকি, সাপ ও বাদুড়ের রক্ত অন্য কোনও জায়গায় লাগলে, সেখানে হাত দিয়ে সেই হাত নাকে বা মুখে দিলে বা অন্য কাউকে ছুঁলেও অসুখের জীবাণু হাতের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

তবে শুধু সংক্রমণ হলেই তো হল না! শরীরের অভ্যন্তরে এই ধরনের ভাইরাস কী ভাবে ছড়িয়ে পড়বে তা না জানলে এর উপযুক্ত চিকিৎসাপদ্ধতি গ্রহণ করাও অসম্ভব। প্রতিষেধক তৈরি না হলেও অসুস্থ মানুষদের আয়ুষ্কাল কিছুটা বাড়িয়ে দিতে বা ভাইরাসের থাবাকে গুটিয়ে আনতে গিয়ে চিকিৎসকরা এর সংক্রমণের পদ্ধতি সম্পর্কেও অবগত হয়েছেন। শরীরে বাসা বাঁধার ক্ষেত্রে আর পাঁচটা ভাইরাসের মতোই এর আচরণটি কিন্তু সরল।

কেমন করে?

নাক-মুখ দিয়ে প্রবেশ করার পর শ্বসনতন্ত্রের (রেসপিরেটরি সিস্টেম) যে কোনও একটি কোষকে টার্গেট করে এই ভাইরাস। সেই কোষটি তখন হয়ে ওঠে ‘হোস্ট সেল’। অতিথি এলে যেমন তাকে যত্নআত্তি করতে হয়, শ্বসনতন্ত্রে এই কোষটিও ভাইরাসের যত্নআত্তি শুরু করে। অধিক যত্ন পাওয়া ভাইরাসের কারণে ফুলেফেঁপে ওঠে হোস্ট সেল। শেষে এক সময় হোস্ট সেল ফেটে ভাইরাসকে উগড়ে দেয় বাইরে। হোস্ট সেলের কাছাকাছি থাকা সবক’টি সেলে তা ছড়িয়ে পড়ে।

করোনার উপসর্গ

ভায়রোলজিস্ট ও চিকিৎসকদের মতে, এই ভাইরাসের প্রধান ও অন্যতম উপসর্গ একটানা সর্দি-কাশি ও বুকে কফ জমে থাকা। সাধারণত কোনও প্রকার ওষুধেই শ্লেষ্মাজনিত সমস্যা না সারলে ‘পিসিআর’ বা পলিমারেস চেন রিঅ্যাকশন পরীক্ষা করে এই ধরনের ভাইরাসের অস্তিত্ব খোঁজা হয়।

সর্দি-কাশির উপসর্গ দিয়ে শুরু হলেও এই ধরনের ভাইরাসের কারণে তা দ্রুত বাড়ে ও প্রবল জ্বর ডেকে আনে। সঙ্গে শ্বাসকষ্টও থাকে। নাক থেকে জল পড়া, বুকে কফ জমে যাওয়া, মাথা যন্ত্রণা, গলাব্যথা এগুলিও এর লক্ষণ। শ্লেষ্মাজনিত অসুখ বেড়ে নিউমোনিয়ার দিকে বাঁক নেয় ও সিভিয়ার নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত করে।

করোনাভাইরাসের হানা থেকে রুখতে বেশ কিছু জরুরি পদক্ষেপের কথা চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।

  • বাদুড়, সাপ ইত্যাদির স্যুপ থেকে চীনে এই ভাইরাস ছড়িয়েছে এমন দাবি থেকে এ সব খাবার ইতিমধ্যেই চীনাদের খেতে নিষেধ করেছেন সে দেশের চিকিৎসকেরা।
  • মাংস খাওয়ার ক্ষেত্রে এখনই কোনও বাধানিষেধ না এলেও রান্নার বেলায় তাদের সুসিদ্ধ করা অবশ্যই দরকার।
  •  প্যাকেটজাত ইমপোর্টেড মাংস আপাতত না কেনার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
  • যখন-তখন মুখে হাত দেওয়া, প্রতি দিন বাড়ি ফিরে ভাল করে হাত-মুখ ধোয়াও যে কোনও রকম ভাইরাসকে আটকে দেওয়ার পদক্ষেপ।
  • শ্বাসের মাধ্যমে এই ভাইরাস শরীরে ঢোকে। তাই ভাইরাস আটকাবে এমন মাস্ক ব্যবহার করুন।
  • সর্দি-কাশি হয়েছে এমন রোগীর থেকে দূরে থাকুন। কোনও ভাবে সংস্পর্শে এলেও ভাল করে হাত-মুখ ধুয়ে নিন।

প্রবাসী টিভির ইউটিউব চ্যানেলে যোগ দিতে এখানে ক্লিক করুন।

ইতিহাসের পাতার সুপারহিট: