১৯৮৩ সালের ২৩ জুলাই। এয়ার কানাডার ১৪৩ নম্বর ফ্লাইট মন্ট্রিল থেকে এডমোন্টন উদ্দেশ্যে উড়ছিল। প্রায় তিন ঘণ্টার ফ্লাইট তখন বিমানে ৮ ক্রু ও ৬১ যাত্রী। একজন জুনিয়র নিয়ে উড়োজাহাজ চালনোর দায়িত্বে ছিলেন পাইলট বব পিয়ারসন।
ভিভোর নতুন চমক! ৬ ক্যামেরা নিয়ে Vivo V17 Pro
৩৯ হাজার ফুট উঁচুতে উড়ার সময় জ্বালানী কমার সংকেত পেলেন। পাইলটরা ভাবলেন সংকেত দিতে ত্রুটি হয়েছে। একটু পর আবার সংকেত বাজল। এবার তারা বুঝতে পারলেন কোথাও সমস্যা হয়েছে। এডমোন্টন থেকে তখন প্রায় ৭০০ মাইল দূরে। কিছুক্ষণ পরেই জ্বালানি ফুরোলে উড়োজাহাজের বাম ইঞ্জিন থামে। তবে ডান ইঞ্জিনটি চলছিল। পাইলটদের বুঝতে আর বাকি নেই একটা দুর্ঘটনা ঘটতে চলেছে। এত ওপরে, দুই ইঞ্জিন বিকল থাকলে উড়োজাহাজ একদম নিচে পড়ে যাবে। তখন চালকদের কোনকিছু করার সুযোগ নেই।
তবে বাম দিকের ইঞ্জিন বন্ধের সময় উড়োজাহাজের অবস্থানের কাছাকাছি কানাডার উইনিপেগে একটি বন্দর ছিল। মাত্র ১২০ মাইল দূরে। ডানের ইঞ্জিনটিও বন্ধ হলে আর পৌঁছান যাবে না। তাই তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে আসতে হবে। তখনও পাইলটরা বুঝতে পারছেন না কিভাবে জ্বালানি সংকট তৈরি হল?
একটু পর ডান দিকের ইঞ্জিন বন্ধ হলে উড়োজাহাজ নিচে নামতে থাকে। তবে উড়োজাহাজের নিচের অংশে আধুনিক প্রযুক্তির একটি র্যা ম এয়ার টারবাইন ছিল। জরুরি পরিস্থিতিতে ছোট যন্ত্রটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়। ফলে উড়োজাহাজ সরাসরি নিচে পড়েনি। পাইলটরাও উড়োজাহাজটি কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিল ।
এদিকে ইঞ্জিন বন্ধের সাথে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়। কিছু যন্ত্রে বিকল্প সরবরাহ থাকে। তা দিয়েই চালকরা গ্রাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারদের যোগাযোগ রাখছিলেন। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই উড়োজাহাজটি রাডারে ধরা না পড়ায় গ্রাউন্ড ইঞ্জিনিয়াররা উড়োজাহাজের অবস্থান সনাক্ত করতে ছিলেন না। তবে দুই দিকের যোগাযোগ ছিল। এমন পরিস্থিতে বুদ্ধি করে গ্রাউন্ড ইঞ্জিনিয়াররা পুরনো একটি রিফ্লেকটিভ রাডার ব্যবহার করেন। সেটিতে উড়োজাহাজ কোথায় জানতে ট্রান্সপন্ডারের প্রয়োজন হয় না। পাইলটের সিগন্যালের ভিত্তিতেই অবস্থান সনাক্ত করা যাচ্ছিল।
এরকম জটিল পরিস্থিতিতে পাইলট বব পিয়ারসন গিমলি নামের পরিত্যক্ত উড়োজাহাজ বন্দরে জরুরি অবতরণ করাবেন বলে ঠিক করলেন। গ্রাউন্ডের ফ্লাইট কন্ট্রোল রুম থেকে জানায়, বন্দরটিতে এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল রুম, টাওয়ার কিছুই নেই। তাছাড়াও খুব ছোট রানওয়ে।
উড়োজাহাজ রানওয়ের নিকটে এলে জুনিয়র পাইলট দেখেন সেখানে বহু মানুষ। পাইলট উড়োজাহাজটি গ্লাইডিং করার মাধ্যমে সোজা ভূমিতে অবতরণ নামালেন। উড়োজাহাজের সম্মুখ ভাগ মুখ থুবড়ে পড়ায় ঘর্ষণ বেড়ে ধীরে ধীরে গতি হ্রাস পায়। ফলে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি হয়নি।
এ ঘটনায় তদন্ত কমিটির অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে আসল ঘটনা। এডমোন্টন উড়োজাহাজবন্দরে রওনার আগে উড়োজাহাজ ও গ্রাউন্ড কর্মীদের পরিমাপের এককের পার্থক্যের ভুলের কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়। সেসময় কানাডায় পরিমাপের মেট্রিক পদ্ধতি চালু হয়। আগে তেলের পরিমাণ পরিমাপ করা হতো পাউন্ডে।
গ্রাউন্ড ফিল্ডের কর্মীরা পূর্বের পরিমাপকের একক ব্যবহার করেছিল। তাই এই বড় ঘটনার সৃষ্টি হয়। আর উড়োজাহাজটি প্রায় অর্ধেকের কম জ্বালানি নিয়ে গন্তব্যে রওনা হয়। সামান্য এই এককের ভুল ইতিহাসে ‘গিমলি গ্লাইডার’ নামেই পরিচিতি পেয়েছে।
সূত্র: বিবিসি এবং ড্যামেনমইন্টারেস্টিং।